হজ্জ বা উমরা পালনে নারীদের চুল কাটার পদ্ধতি

প্রশ্ন

আমার মা উমরা আদায় করার পর অজ্ঞতাবশতঃ শুধু এক গুচ্ছ চুল কেটেছেন। এখন এর হুকুম কী?


উত্তরঃ

আলহামদুলিল্লাহ।

মাথা মুণ্ডন কিংবা চুল ছোট করা উমরার একটি ওয়াজিব কাজ। নারীদের জন্য মাথা মুণ্ডন করার অনুমতি নেই। তাদের জন্য অনুমোদিত হল চুল ছোট করা। তবে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী মাথার সবগুলো চুল ছোট করা আবশ্যক। এটি মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। যদি কারো মাথার চুলগুলো বেণী করা থাকে তাহলে সবগুলো বেণীর মাথা থেকে কাটবে। যদি বেণী করা না থাকে তাহলে সবগুলো চুল একত্রিত করে সবগুলো চুল থেকে কাটবে। মুস্তাহাব হচ্ছে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কাটা। এর চেয়ে কমও কাটতে পারেন। যেহেতু চুল কাটার পরিমাণ নির্ধারণমূলক কোন শরয়ি দলিল বর্ণিত হয়নি।

আল-বাযি (রহঃ) ‘আল-মুনতাকা’ গ্রন্থে (৩/২৯) বলেন: পক্ষান্তরে, কোন নারী যখন ইহরাম করার মনস্থ করবেন তখন তিনি তার চুল বেণী করে নিবেন যেন তিনি হালাল হওয়ার জন্য চুল কাটতে পারেন। কী পরিমাণ চুল কাটবেন? ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ। ইবনে হাবিব ইমাম মালেক থেকে বর্ণনা করেন যে, আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কিংবা এর চেয়ে একটু বেশি কিংবা এর থেকে একটু কম। ইমাম মালেক বলেন: আমাদের মাযহাবে এর সুনির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নেই। যতটুকু কাটে সেটা জায়েয হবে। তবে, মাথার সবগুলো চুল কাটতে; সেটা লম্বা চুল হোক কিংবা খাটো চুল হোক।[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

ইবনে কুদামা (রহঃ) তাঁর মুগনি নামক গ্রন্থে (৩/১৯৬) বলেন:

চুল কাটা কিংবা মুণ্ডন করা সবগুলো চুল থেকে করতে হবে। নারীদেরকেও এভাবে করতে হবে (অর্থাৎ চুল ছোট করার ক্ষেত্রে)। এটিই আমাদের অভিমত। ইমাম মালেকও এটাই বলেছেন।[সমাপ্ত]

তিনি আরও বলেন: যতটুকু কাটুক না কেন জায়েয হবে। ইমাম আহমাদ বলেন: আঙ্গুলের কর পরিমাণ কাটবে। এটি ইবনে উমর (রাঃ), শাফেয়ি, ইসহাক, আবু সাওর এর অভিমত। ইবনে উমর (রাঃ) এর উক্তির কারণে এটাকে মুস্তাহাব হিসেবে ধরা হবে।[সমাপ্ত]

তিনি আরও বলেন (২/২২৬):

নারীরা আঙ্গুলের কর পরিমাণ নিজ মাথার চুল কাটবে। আঙ্গুলের কর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সর্ব উপরের গিরা থেকে আঙ্গুলের মাথা। নারীদের ক্ষেত্রে বিধান হচ্ছে চুল ছোট করা; মুণ্ডন করা নয়। এ বিষয়ে কোন ইখতিলাফ নেই। ইবনুল মুনযির বলেন: আলেমগণ এর উপর ইজমা করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নারীদের উপরে মাথা মুণ্ডন নেই; তাদের জন্য রয়েছে- চুল ছোট করা।”[সুনানে আবু দাউদ] আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে মাথা মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন।”[সুনানে তিরমিযি] ইমাম আহমাদ বলতেন: “চুলের প্রত্যেক বেণী থেকে এক কর পরিমাণ কর্তন করবে।” এটি ইবনে উমর (রাঃ), শাফেয়ি, ইসহাক, আবু সাওর প্রমুখের অভিমত। আবু দাউদ বলেন, “আমি ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি: নারীরা কি সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে? তিনি বলেন: হ্যাঁ। মাথার সবগুলো চুলকে সামনের দিকে এনে চুলের আগা থেকে আঙ্গুলের কর পরিমাণ কর্তন করবে।”[সমাপ্ত]

শাইখ বিন উছাইমীন (রাঃ) ‘আল-শারহুল মুমতি’ (৭/৩২৯) গ্রন্থে বলেন: তাঁর কথা: “নারীরা কর পরিমাণ কর্তন করবে”। অর্থাৎ আঙ্গুলের কর পরিমাণ। আঙ্গুলের কর হচ্ছে- আঙ্গুলের গিরা। অর্থাৎ কোন নারীর চুলে যদি বেণী থাকে তাহলে তিনি চুলের বেণী (মুঠ করে) ধরবেন; চুলের বেণী না থাকলে চুলের আগা ধরবেন; ধরে আঙ্গুলের কর পরিমাণ কাটবেন। আঙ্গুলের করের পরিমাণ প্রায় ২ সেঃমিঃ। বর্তমানে নারীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হচ্ছে তারা চুলের আগা আঙ্গুলে পেঁচায়, যেখানে চুলের দুই প্রান্ত মিলিত হয় সে স্থানে কাটাকে ওয়াজিব মনে করে — এটি সঠিক নয়।[সমাপ্ত]

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যিনি এক গুচ্ছ চুল কেটেছেন তিনি শরিয়তসম্মতভাবে চুল কাটেননি। এখন তার কর্তব্য হচ্ছে, আমরা চুল কাটার যে পদ্ধতি উল্লেখ করেছি সেভাবে চুল কাটা। ইতোমধ্যে তিনি ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ এমন যেসব বিষয়ে লিপ্ত হয়েছেন সেগুলোর জন্য তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে এমন এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যিনি তার উমরা সম্পন্ন করতে পারেননি: আর এ নারী যেসব ইহরাম-নিষিদ্ধ কার্যাবলিতে লিপ্ত হয়েছেন; যেমন ধরুন তার স্বামী তার সাথে সহবাস করেছে। ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা কঠিনতর নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। কেননা এ নারী অজ্ঞ ছিল। প্রত্যেক ব্যক্তি যিনি অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা ভুলক্রমে কিংবা জবরদস্তির শিকার হয়ে ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ এমন কোন কর্মে লিপ্ত হন তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না।[শাইখ ইবনে উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (২১/৩৫১) থেকে সমাপ্ত]

তাঁকে আরও জিজ্ঞেস করা হয় এমন এক লোক সম্পর্কে যে ব্যক্তি উমরা আদায় করার পর তার মাথার শুধু এক অংশের চুল কেটেছে, এরপর তার পরিবারের কাছে ফিরে আসার পর তার কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, তার কাজটি ভুল ছিল; এমতাবস্থায় তার কর্তব্য কী? জবাবে তিনি বলেন: যদি তিনি অজ্ঞতাবশতঃ তা করে থাকেন তাহলে তার কর্তব্য হচ্ছে, এখনি সাধারণ কাপড় খুলে (ইহরামের কাপড় পরিধান করা) এবং পরিপূর্ণভাবে মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করা। তার এ ভুল ক্ষমার্হ। কেননা তিনি জানতেন না। মক্কায় অবস্থান করে মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করা শর্ত নয়। বরং মক্কাতে ও মক্কার বাহিরে এ কাজ করা যায়। আর যদি তিনি কোন আলেমের ফতোয়ার ভিত্তিতে এ আমল করে থাকেন তাহলে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমরা আলেমগণকে জিজ্ঞেস কর; যদি তোমরা না জান।”[সূরা নাহল, আয়াত: ৪৩] কোন কোন আলেমের অভিমত হচ্ছে- মাথার কোন একটি অংশ থেকে চুল কাটা গোটা মাথার চুল কাটার পর্যায়ভুক্ত।[আল-লিকাউস শাহরি (১০নং) থেকে সমাপ্ত]

নারীদের চুল কাটার পূর্বে পোশাক পরিবর্তন করা আবশ্যক নয়। কেননা নারীর জন্য ইহরাম অবস্থায় সাধারণ পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ নয়। বরং তার জন্য শুধু নেকাব ও মোজা পরা নিষিদ্ধ।

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *